৯২ শতাংশ গাছে মুকুল এসেছে
চাঁপাইনবাবগঞ্জে আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৩ লাখ ৮৬ হাজার টন
স্টাফ রিপোর্টার
আপলোড সময় :
১১-০৩-২০২৫ ০৭:৪৭:২৭ অপরাহ্ন
আপডেট সময় :
১১-০৩-২০২৫ ০৭:৪৭:২৭ অপরাহ্ন
ছবি: সংগৃহীত
পাতার ফাঁকে ফাঁকে উঁকি দিচ্ছে আমের মুকুল। ফাল্গুনে প্রকৃতির এই সাজ ও মুকুলের মৌ মৌ গন্ধে মন জুড়াচ্ছে আমের রাজধানী চাঁপাইনবাবগঞ্জের আমচাষিদের। চলতি মৌসুমে কুয়াশা কম থাকায় দুই সপ্তাহ আগেই গাছে এসেছে আমের মুকুল। আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ লাখ ৮৬ হাজার মেট্রিক টন। তবে অভ্যন্তরীণ বাজার ও রফতানি কার্যক্রমে গতি না আসলে বেশি আম উৎপাদনের বছরেও ক্ষতির আশঙ্কা আমচাষিদের।
জানা যায়, জেলার আম বাগানগুলোতে প্রায় ৯২ শতাংশ গাছে দেখা দিয়েছে মুকুল। যারমধ্যে ৪০-৪৫ শতাংশ গাছে দেখা দিয়েছে আমের গুটি। আমচাষি ও কৃষি বিভাগ জানায়, চাঁপাইনবাবগঞ্জে এবার আম মৌসুমের অন ইয়ার অর্থাৎ বেশি ফলনের বছর। পাশাপাশি কুয়াশা কম থাকায় মৌসুমের শুরুতেই ব্যাপক হারে মুকুল দেখা দিয়েছে জেলার আমবাগানগুলোতে। গাছে থাকা মুকুল যাতে ঝরে না পড়ে তাই কীটনাশক স্প্রে ও সেচসহ বিভিন্ন পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা।
আমের রাজধানী খ্যাত চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় রয়েছে শতবর্ষীসহ বিভিন্ন বয়সের ৮১ লাখ ৫২ হাজার ৪৯০টি আমগাছ। আমবাগানের আয়তন ৩৭ হাজার ৫০৪ হেক্টর জমি। এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় প্রায় সব গাছেই মুকুল এসেছে। জেলায় গড়ে ৯২ ভাগ আমগাছে মুকুল আসে।
সদর উপজেলায় আমগাছ আছে ১১ লাখ ৯ হাজার ৯০০টি। এর মধ্যে মুকুলিত হয়েছে ৯০ ভাগ আমগাছ। এই ৯০ ভাগ গাছে এরই মধ্যে কোনো কোনোটিতে সরিষা দানা আবার কোনো কোনোটিতে মটর দানার মতো আমের গুটি বেরিয়েছে ৫৫ ভাগ।
শিবগঞ্জ উপজেলায় আমগাছ আছে ২২ লাখ ৭৪ হাজার ২৫টি। এর মধ্যে মুকুল এসেছে ৮৫ ভাগ আমগাছে। এই ৮৫ ভাগ গাছের মধ্যে বর্তমানে সরিষা দানা ও মটর দানার আকারের গুটি বেরিয়েছে ৩৫ ভাগ গাছে।
গোমস্তাপুর উপজেলায় আমগাছ আছে ৭ লাখ ৯৬ হাজার ১০০টি। এর মধ্যে মুকুলিত হয়েছে ৯৬ ভাগ আমগাছ। এরই মধ্যে ৪০ ভাগ গাছে ছোট আমের গুটি দেখা দিয়েছে।
নাচোল উপজেলায় আমগাছ আছে ৩০ লাখ ৪ হাজার ৩৩০টি। এর মধ্যে ৯৩ ভাগ আমগাছে মুকুল এসেছে। এরই মধ্যে ৭০ ভাগ গাছে সরিষা ও মটর দানা আকারের আম লক্ষ্য করা গেছে ৭০ ভাগ।
ভোলাহাট উপজেলায় আমগাছ রয়েছে ৯ লাখ ৬৮ হাজার ১৩৫টি। এর মধ্যে মুকুলিত হয়েছে ৯৫ ভাগ আমগাছ। বর্তমানে ৪৫ ভাগ গাছে আমের গুটি বেরিয়েছে।
এ বিষয়ে আমচাষি তারেক রহমান জানান, এ বছর এখন পর্যন্ত আবহাওয়া ভালোই আছে। গাছে প্রচুর পরিমাণে মুকুল এসেছে। মুকুল ফুটে এখন গুটি বের হচ্ছে। আশা করা যায়, এ বছর বাম্পার ফলন হবে। গতবছর কম ফলন হওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলাম। তবে এ বছর বেশি ফলন হলেও ক্ষতির আশঙ্কা থেকেই যায়। কারণ আমের দাম কম হওয়ার আশঙ্কা থাকে। পাশাপাশি বাইরে আম রফতানি না হলে বা প্রক্রিয়াজাতকরণ না হলে বেশি ফলন হলেও ক্ষতিগ্রস্ত হবেন চাষিরা।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মুনজের আলম মানিক বলেন, ‘অন ইয়ারের প্রভাবে জেলার আমবাগানগুলোতে বেশি ফলন হওয়ায় চলতি বছর বাণিজ্যিক সম্ভাবনা রয়েছে ব্যাপক। তবে এই সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে আমের বিভিন্ন প্রক্রিয়াজাত পণ্য উৎপাদন ও বিদেশে আম রফতানি বৃদ্ধি করতে হবে। তা না হলে বেশি ফলন হলেও ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা কৃষকদের।
কৃষি বিভাগ ও সরকারের প্রতি আমের বাণিজ্যিক সম্ভাবনাকে শতভাগ কাজে লাগাতে আম প্রক্রিয়াকরণ শিল্প স্থাপন ও এই খাতে বিনিয়োগের দাবি এই কৃষক নেতার।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক ড. পলাশ সরকার বলেন, ‘এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় যথাসময়ে আমগাছগুলোতে মুকুলিত হয়। যারা আমগাছের পরিচর্যা করেছেন, তাদের গাছে বেশি মুকুল এসেছে এবং টিকেও গেছে। তবে যারা পরিচর্যা করেননি, তাদের গাছগুলোয় কিছুটা মুকুল নষ্ট হয়েছে। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে কৃষকদের যথাযথ পরিচর্যা ও যত্ন নিতে পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আম বেশি উৎপাদনের বছরে যাতে কৃষকরা ভালো দাম পান, সেদিকে নজর দেয়া হচ্ছে। আম প্রক্রিয়াজাতকরণ ও বিদেশে আম রফতানিতে নেয়া হয়েছে বিভিন্ন উদ্যোগ। আশা করা যায়, এতে ভালো দাম পেয়ে এ বছর লাভবান হতে পারবেন আমচাষিরা।
চলতি মৌসুমে জেলায় ৩৭ হাজার ৫০৪ হেক্টর জমিতে আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ লাখ ৮৬ হাজার মেট্রিক টন। গত বছর জেলায় ৩৭ হাজার ৬০৪ হেক্টর জমিতে আম উৎপাদন হয়েছিল প্রায় সাড়ে ৪ লাখ মেট্রিক টন।
বাংলাস্কুপ/প্রতিনিধি/এনআইএন/এসকে
প্রিন্ট করুন
কমেন্ট বক্স